
A symposium on ‘Awareness for snakebite management: Bangladesh persoective’
May 5, 2014
An advocacy meeting on prevention of Nipah virus infection in Bangladesh
May 7, 2014সেন্টমার্টিন দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। কুকুর এখানকার স্বাভাবিক বাস্তুসংস্থানের প্রাকৃতিক অংশ নয়। কালের পরিক্রমায় ভ্রমণপিপাসু মানুষ, ব্যবসায়ী ও জেলেদের হাত ধরে এসেছে ওরা। নির্মল বিনোদন ও নিরাপত্তার খাতিরে সঙ্গে নিয়ে আসা কুকুরগুলো প্রয়োজন শেষে বেশিরভাগক্ষেত্রে রেখে চলে গেছে মানুষ। তাদের বর্তমান অবস্থান “মুক্ত ভবঘুরে”। অভিভাবকহীন এসব কুকুর সেন্টমার্টিনের স্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে, বংশবৃদ্ধি করছে। এজন্য তাদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, বেড়েই চলছে।
দেশের অন্য এলাকার কুকুরের সঙ্গে সেন্টমার্টিনে বাসরত কুকুরের মধ্যে পার্থক্য আছে। অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং নিরাপদ খাদ্যজালের কারণে এখানকার কুকুরগুলোর স্বাভাবিক প্রজনন হার অনেক বেশি এবং কুকুরছানার মৃত্যুহার অনেক কম। এ কারণে অনিয়ন্ত্রিত কুকুর বৃদ্ধি প্রবাল দ্বীপের সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য, স্বাভাবিক বাস্তুসংস্থানের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার পক্ষে ক্রমশ বড় হুমকি হয়ে উঠছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের (সিডিসি) অপারেশনাল প্ল্যান অন্তর্ভুক্ত জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম অধীন জাতীয় জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচির ব্যাপকহারে কুকুর টিকাদান কার্যক্রম ২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী সেন্টমার্টিনে ১,২০০-রও বেশি কুকুর রয়েছে। তবে স্থানীয় লোকজন এই সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি বলে দাবি করে।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের আয়তন ৮ বর্গ কিলোমিটার এবং বর্তমান জনসংখ্যা ৭,৩০০। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এবং জাতীয় জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচির সহায়তায় ঢাকা শহরে জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা পরিচালিত ২০২১ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, দুই সিটি কর্পোরেশন মিলিয়ে প্রতি কিলোমিটার এলাকায় কুকুর রয়েছে প্রায় ১৭টি এবং শহরে মোট কুকুর সংখ্যা ৭৩,৭৭৮।
বৈজ্ঞানিক হিসেবে গড়পড়তায় একটি নির্দিষ্ট এলাকায় প্রতি ১০০ জন মানুষের বিপরীতে একটি কুকুর থাকাকে স্বাভাবিক ধরা হয়। আজকের সময়ে দেশের যেকোনো নগর, মফস্বল, গ্রামের মোট আয়তন ও জনসংখ্যার বিপরীতে সর্বোচ্চ কুকুর ঘনত্ব সেন্টমার্টিনে। কাজেই জনঘনত্ব ও আয়তন উভয় বিবেচনায় প্রবাল দ্বীপে কুকুরের মোট সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত, চরম অস্বাভাবিক।
অত্যাধিক কুকুর সেন্টমার্টিনের বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী যেমন- সামুদ্রিক কচ্ছপ, লাল কাঁকড়ার ডিমপাড়া হ্রাস ও তাদের নাটকীয় সংখ্যা হ্রাসে সরাসরি প্রভাব বিস্তার করছে। অস্বাভাবিক কুকুর থাকার কারণে সেখানে কুকুর-মানুষ (ট্যুরিস্ট) বৈরিতাও বেশি। শুধু তাই নয়, অফ সিজনে যখন সেন্টমার্টিনে ট্যুরিস্টদের আসা-যাওয়া বন্ধ থাকে, তখন ওখানকার গৃহপালিত প্রাণী-পাখি এবং মাছবোঝাই বোটগুলোকেও তারা টার্গেট করে। এতে জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়ে এবং জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়।
কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে তাদের নৃশংস নিধন কিংবা অপসারণ কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। কুকুর নিধন, অপসারণের কাজটি বেশ অমানবিক, বিপজ্জনক। পরিবেশ দূষণ ও রোগ সংক্রমণের বড় কারণ। এতে ব্যয়ও অনেক। এতে তাদের সংখ্যা আপাতত কমছে মনে হলেও পরবর্তীতে উল্টো বেড়ে যায়। কুকুর নিধন কিংবা অপসারণ বৈজ্ঞানিকভাবে অকার্যকর প্রমাণিত। এজন্য দেশের প্রচলিত ‘‘প্রাণিকল্যাণ আইন, ২০১৯”-এর ধারা ৭ অনুযায়ী নির্বিচারে মালিকবিহীন প্রাণি নিধন বা অপসারণ দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচ্য এবং এই ধারার উপ-ধারা (২) অনুযায়ী অপরাধীর শাস্তি ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ১০,০০০ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।
উদ্ভূত এসব সমস্যা নিরসনে একমাত্র বন্ধ্যাকরণ-ই সেন্টমার্টিনে কুকুরের সংখ্যাধিক্য হ্রাস ও নিয়ন্ত্রণের টেকসই এবং বিজ্ঞানসম্মত সমাধান। পাশাপাশি কুকুরগুলোর দায়িত্বশীল অভিভাবকত্ব/মালিকানা প্রসারণ, সুষ্ঠু খাদ্যবর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং অন্যত্র অ্যাডপশন প্রয়োজন। এজন্য আন্তর্জাতিক প্রাণীকল্যাণ স্ট্যান্ডার্ড মেনে সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার দায়িত্বশীল ভূমিকায় যেসব অংশীজন কাজ করে, তাদের পারস্পরিক সমন্বয়পূর্বক যুগোপযুগী পদ্ধতিতে সেন্টমার্টিনে কুকুর বন্ধ্যাকরণ অত্যন্ত জরুরি।
ডা. এম. মুজিবুর রহমান
এমডিভি এক্সপার্ট, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর